হিটস্ট্রোক,স্ট্রোক,পাখির গরম


হিটস্ট্রোক কী?


 গ্রীষ্মে আবহাওয়া উষ্ণায়নের জন্য পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়,এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য পাখালরা যে বিপদের সম্মুখীন হন তার নাম হিটস্ট্রোক।

হিটস্ট্রোক সমস্ত উষ্ণ রক্তের প্রাণিদের একটি সাধারণ সমস্যা। সাধারণত যখন পাখি গুলি দীর্ঘ সময়ের জন্য উচ্চতাপমাত্রার সংস্পর্শে আসে এবং অনেক সময় সরাসরি  সূর্যের প্রখর তাপের মধ্যে থাকে,তখনই এই সমস্যা হয়।এই হিটস্ট্রোক পাখির জন্য খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতি এবং পাখির জন্য আসলেই খুবই ভয়ানক একটি সমস্যা।

 

হিটস্ট্রোক কেন হয় ?

 

হিটস্ট্রোক কেন হয় তার কিছু কারণ নিচে দেওয়া হলোঃ

পাখির শরীরে অন্যান্য উষ্ণ রক্তের প্রাণীর মতো ঘামগ্রন্থি থাকে না,যার ফলে পাখি শরীরের অপ্রয়োজনীয় তাপ সহজে শরীর থেকে বের করতে পারে না।পাখি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহ থেকে অপ্রয়োজনীয় তাপ বাইরে বের করে দেয়।এছাড়াও পাখির শরীরের যেসব অঞ্চলে পশম থাকেনা,যেমনঃঠোঁট,পা,ডানার নিচের অংশ দিয়েও পাখি সামান্য পরিমাণে তাপ অপসারণ করে। কিন্তু অতিরিক্ত তাপমাত্রায় পাখি এতো দ্রুত তাপমাত্রা শুধু মাত্র মুখ দিয়ে অপসারণ করতে পারে না। ফলে পাখির দেহের তাপমাত্রা আকস্মিকভাবে বেড়ে যায়।অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে পাখির শরীরে পানি এবং অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়।অক্সিজেনের অভাবে দেহের রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।ফলে মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য স্থানে রক্ত চলাচল করতে পারে না,ফলে রক্ত জমাট বাধতে শুরু করে এবং যখন মস্তিষ্কের রক্তও জমাট বাধে, তখনই পাখিটি হিটস্ট্রোক করে মারা যায়।

 

) অতিরিক্ত ওজনের পাখি গুলিই হিটস্ট্রোকে বেশি আক্রান্ত হয়।কারণ অতিরিক্ত ওজনের পাখিদের শরীরের ধমনী,শিরা,উপশিরায় ফ্যাট জমার কারণে ধমনী বা শিরা গুলো সংকুচিত হয়ে যায়,ফলে দেহে রক্ত চলাচল সঠিকভাবে হয় না।এবং অতিরিক্ত গরমে অল্পেই পাখি গুলো হিটস্ট্রোক করে মারা যায়।

 

অতিরিক্ত তাপমাত্রায় পাখির শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ নির্গত হয়,ফলে পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দ্রুত হ্রাস পায় এবং ইমিউনিটি সিস্টেম দূর্বল হয়ে যায়। ফলে একটা সুস্থ পাখিও হঠাৎ করেই হিটস্ট্রোক করে মারা যায়।

 

কী কী কারণে হিটস্ট্রোক হয়?

 

পাখিকে সরাসরি সূর্যের আলোতে রাখলে।

 

আবদ্ধ কোন স্থানে রাখলে,যে যায়গায় বায়ু প্রবাহ খুবই কম।

 

পাখিকে কোন স্থানে পরিবহনের সময় কোন বক্স বা ঠোঙায় করে নিয়ে যাওয়া।

 

পরিবেশ  গরম করে এমন কোন বস্তু পাখির রুমে ব্যবহার করা। (বাল্ব,রুম হিটার, কয়েল ইত্যাদির ব্যবহার)

 

পাখির ওজন অতিরিক্ত হলে।

 

পাখিকে গরমের মধ্যে  ব্রিডে দিলে।

 

পাখিকে প্রচন্ড গরম পরিবেশে  রাখলে এবং ছায়াযুক্ত স্থানে না রাখলে।

 

একই কলোনীতে অতিরিক্ত পাখি রাখলে এবং কলোনী বা খাচার সাইজ ছোট হলে।

 

পাখি গাড়িতে পরিবহনের সময় সাবধান না হলে।

 

১০তাপমাত্রা ৩০°সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি হয়ে গেলে।

 

১১পাখিকে নিয়মিত গোসল না করালে।

 

১২গরমে অতিরিক্ত তৈলবীজ খেতে দিলে।

 

হিটস্ট্রোকের লক্ষণ

 

হিটস্ট্রোকের অনেকগুলো লক্ষণ আছে,কি কি লক্ষণ দেখে বুঝতে পারবেন পাখি হিটস্ট্রোকের কবলে পতিত হচ্ছে,সেই লক্ষণ গুলো জেনে নেওয়া যাক।

 

পাখি ঠোট হা করে রাখবে এবং মুখ দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ করার মাধ্যমে  অতিরিক্ত তাপ অপসারণের চেষ্টা করবে।

 

অতিরিক্ত তাপ অপসারণের জন্য পাখি ডানা দুটো শরীর থেকে দূরে রাখবে,এবং মাঝে মাঝে দ্রুত ডানা ঝাপটাবে তাপ অপসারণের জন্য।

 

পাখি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে।

 

পাখি দ্রুত তার স্থান পরিবর্তন করতে থাকবে এবং এক খাচার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে বেড়াবে।

 

খাচায় ঝুলে থাকবে এবং স্থির থাকবে না,এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে ঝুলে থেকে বাতাসের সন্ধান করবে।এবং খাচার সবচেয়ে  শীতল জায়গা খুজবে।

 

স্নায়বিক সমস্যার জন্য মাথা নিচের দিকে ঝুকিয়ে দিবে।

 

মুখ দিয়ে শব্দ করবে।

 

একসময় নড়াচড়া বন্ধ করে দিবে শরীরের  তাপমাত্রা স্থির রাখার জন্য ,যেন শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি না পায়।

 

) একসময় পার্চ থেকে খাচার নিচে পড়ে যাবে,দাড়ানোর ক্ষমতাও থাকবে না।

 

১০কখনো কখনো পাখি অজ্ঞানও হয়ে যায়।

 

১১খাচার গায়ে পাখি স্নায়বিক যন্ত্রণায় আঘাত করতে থাকে।


পাখি হিটস্ট্রোক করলে যা যা করতে হবে

 

পাখি হিটস্ট্রোক করলে পাখিকে দ্রুত একটা শীতল এবং শান্ত জায়গায় নিতে হবে। তারপর ফ্যান ছেড়ে দিতে হবে, পারলে হাতপাখা দিয়েও বাতাস করতে পারেন। তারপর পাখির ডানার নিচে হালকা পানি স্প্রে করতে হবে। এতে পাখির শরীর কিছুটা শীতল এবং ময়েশ্চারাইজড হবে। তারপর পাখিটিকে একটা বাটিতে পানিতে নিয়ে তারমধ্যে প্রথমে পা ডুবিয়ে দিন।পা কিছু সময় ডুবিয়ে রাখার পর পাখির মাথা বাদে বাকি সারা শরীর

 

(কলের নরমাল পানি ইউজ করবেন) পানিতে ডুবিয়ে দেন।

 

(প্রথম অবস্থায়ই পাখিকে পানিতে ডুবানো যাবে না।)

 

 এসময় পাখির মুখে ড্রপার বা সিরিঞ্জের সাহায্যে পানি,ডাবের পানি,ইলেক্ট্রামিন, গ্লুকোজ,এলোভেরার দ্রবণ বা লেবুর দ্রবণ / ফোটা দিন।তারপর পাখিটাকে পানি থেকে তুলে একটা ভেজা কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখুন,পাখিটি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত। পাখিটি স্বাভাবিক হলে খাচায় ছেড়ে দিন।

 

 পাখির হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ করতে আমরা যা যা করতে পারি


পাখির অতিরিক্ত ওজন যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।

 

তাপমাত্রা স্বাভাবিক এমন স্থানে পাখি রাখা।

 

পাখির জন্য দিনে বার নরমাল ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করা।ফ্রিজের পানি দেওয়া যাবে না।

 

) অভিজ্ঞ না হলে গরমের মধ্যে  পাখিকে ব্রিডে দেওয়া যাবে না।

 

প্রতিদিন প্রচুর শাকসবজি দিতে হবে।

 

সপ্তাহে / দিন মৌসুমী বিভিন্ন ফল দিতে পারেন।

 

ছায়াযুক্ত স্থানে পাখিকে রাখতে হবে।তাই বলে  স্যাঁতসেঁতে স্থানে নয়।

 

পাখি পরিবহনের ক্ষেত্রে ক্যারিং কেজ ইউজ করা।

 

খাবারে তৈলবীজ কমিয়ে দিতে হবে।

 

১০এগফুড সপ্তাহে - দিনের বেশি দেওয়া যাবে না।


১১) তাপমাত্রা ৩০° সেলসিয়াসের বেশি হওয়া যাবে না।


১২) পাখিকে নিয়মিত এলোভেরার দ্রবন,ডাবের পানি,লেবুর দ্রবণ,ইলেক্ট্রামিন,গ্লুকোজ ইত্যাদি দিতে হবে।


১৩) নিয়মিত গোসল করাতে হবে, পাখি নিজে গোসল না করলে স্প্রে করে দিতে হবে (বেলা ১২-২ টার মধ্যে) ।


এছাড়াও অতিরিক্ত সতর্কতা হিসাবে  হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে আপনারা এই কোর্সটি ফলো করতে পারেনঃ
অরিজিনাল জার্মান হোমিও
একোনাইট ২০০-----২ দিন
ডালকামারা২০০------৩ দিন
গ্লোনইন২০০-------৩ দিন
প্রতিটা মেড ১০০ মিলি পানিতে ৪ ফোটা করে ইউজ করবেন।
এতো কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পাখির জন্য এগফুড